India Wins T20 Asia Cup by Beating Pakistan

সিঁদুর মোছার জবাব দিল তিলক, পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের খেতাব জিতল ভারত

এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল ১৮০ রান অন্তত উঠবেই। ওপেনিং জুটিতে ৮৪ রান ওঠার পরও তাদের ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে ইনিংস থেমে যায়। শেষ সাত উইকেটের পতন হয় ৩২ রানে। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের ব্যাটাররা।

এশিয়া কাপ জিতল ভারত।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:৩০

পহেলগাঁওয়ে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে মুছেছিল ২৬ জনের ‘সিঁদুর’। ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্তে জবাব তার দিয়েছে। জবাব দেওয়া বাকি ছিল খেলার মাঠে। রবিবার দুবাই স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করে এশিয়া কাপের খেতাব জিতল ভারত। এ দিনের ম‍্যাচে তিলক বর্মার দুরন্ত ইনিংস ভারতকে জয় এনে দিয়েছে, তা বলাই যায়। রবিবারের টি-২০ এশিয়া কাপের ফাইনাল ম‍্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি একাই ৬৮ রান করেছেন। জেতার পরে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শুরুটা দেখে মনে হয়েছিল ১৮০ রান অন্তত উঠবেই। ওপেনিং জুটিতে ৮৪ রান ওঠার পরও তাদের ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে ইনিংস থেমে যায়। শেষ সাত উইকেটের পতন হয় ৩২ রানে। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানের ব্যাটাররা। কুলদীপ চার উইকেট নিলেন। অক্ষর আর বরুণ নিলেন দুটি করে উইকেট। আর শেষ দুটি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস থামালেন জশপ্রিত বুমরাহ। ভারতকে জিততে হলে করতে হত ১৪৭ রান। এই নিয়ে পরপর তিনটি রবিবারে পাকিস্তানকে হারিয়ে জয়ের হ‍্যাটট্রিক করেছে ভারতীয় বিগ্রেড।

জয়ের জন্য ১৪৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় ‘টিম ব্লু’। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে দুরন্ত খেলা অভিষেক শর্মা মাত্র ৫ রান করে ফাহিম আশরফের বলে হ্যারিস রউফের হাতে ক্যাচ তুলে প‍্যাভেলিয়নে ফিরে যান। এ দিনও রান পেলেন না ভারতের অধিনায়ক। শাহিন আফ্রিদির বলে মাত্র এক রান করে ফিরে যান। ভারতের দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয় ১০ রানে। শুভমান গিলও রান পেলেন না। ১০ বলে খেলে ফাহিমের বলে ১২ রান করে ফিরলেন তিনি। এ দিনই চলতি এশিয়া কাপের পাওয়ার প্লেতে সব থেকে কম রান তুলল ভারত। প্রথম ছয় ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে উঠল ৩৬ রান।

প্রথম দশ ওভারে ভারতের উঠল তিন উইকেট হারিয়ে ৫৮। গ‍্যালারিতে বসে থাকা ভারতীয় সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ লক্ষ করা গিয়েছিল। ১২ রানে জীবনদান পেয়েছিলেন সঞ্জু। কিন্তু ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে পারলেন না। ২৪ রান করে আবরার আহমেদের বলে আউট হলেন তিনি। ৭৭ রানে ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন হয়।

এ দিন দুবাইয়ে এশিয়া কাপের হাইভোল্টেজ ম‍্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। যদিও চোটের জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থেকে বাদ পড়ে যান দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। দলে ফিরেছেন শিবম দুবে। দলে একমাত্র স্পেশালিস্ট পেসার হিসাবে ছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ।

হার্দিকের অবর্তমানে ভারতের হয়ে এ দিন বোলিং ওপেন করলেন শিবম দুবে। এ দিকে পাকিস্তানের দুই ওপেনার প্রথম থেকেই আক্রমনাত্মক পথ বেছে নিয়েছিল। প্রথম চার ওভারে ৩২ রান ওঠে। ভারতের বিরুদ্ধে সুপার ফোরের ম্যাচে অর্ধশতক রান করা শাহিবজাদা ফারহান প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। বুমরাহর দ্বিতীয় ওভারে নিলেন ১২ রান। পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তান তুলল ৪৫ রান।

চলতি এশিয়া কাপে এই প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট পায়নি ভারত। ফাইনালে ৩৬ বলে ফারহানের অর্ধশতক রান করেন। তার ঠিক দুই বল পরেই ওই পাক ওপেনার ৫৭ রান করে প‍্যাভিলিয়নে ফিরে যায়। বরুণ চক্রবর্তীর বলে তিলক বর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরতে হয় তাকে।

ফাইনালে ১০ ওভারে পাকিস্তান তোলে ৮৭ রান।  ১২ তম ওভারে বল করতে আসেন বোলার তিলক বর্মা। তাঁকে চার মেরে ফকর জামান পাকিস্তানের রান ১০০ পার করে দেয়। এ দিন প্রথম দুই ওভারে নিজের ছন্দে ফিরতে ব‍্যার্থ কুলদীপ। অবশেষে নিজের তৃতীয় ওভারে সাফল্য পেলেন। তাঁর বলে জসপ্রীত বুমরাহর হাতে ক্যাচ তুলে ১৪ রান করে সাইম আইয়ুব ফিরে যায়।

এর পরই মহম্মদ হ্যারিসকে খাতা খোলার আগেই ফেরালেন অক্ষর প্যাটেল। রিঙ্কু সিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হল। ১১৪ রানে পাকিস্তানের তৃতীয় উইকেটের পতন হল। বরুণ চক্রবর্তীর বলে কুলদীপের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরল ফকর। ফকর ৩৫ বল খেলে ৪৬ রান করেছে। পাকিস্তানের মিডল অর্ডার যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করল। ভারতীয় বোলারদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাঁচ রানের মধ্যেই ফের উইকেট পতন হয়। অক্ষরের বলে মাত্র এক রান করে সঞ্জুর হাতে ক্যাচ তুলে ফিরে যায় হুসেন তালাত। এর পরই কুলদীপের বলে এক রান করে ফিরতে হল পাক অধিনায়ক সলমন আঘাকে। পাক ব‍্যাটারদের কাছে ভারতীয় বোলারেরা যেন ত্রাস! কুলদীপের বলে শাহিন আফ্রিদিও আগেই ফিরল। খাতা খুলতে পারেনি সে। তাঁরই বলে এর পর শূন্য করে ফিরল ফাহিম আশরফ। চার ওভারে ৩০ রান দিয়ে চাপ উইকেট নিলেন কুলদীপ।

নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে হ্যারিস রউফকে (৬) ফেরালেন জসপ্রীত বুমরাহ। এর পর নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে পাকিস্তানের নাচিয়ে দিলেন বুমরাহ। ৩২ রানে পড়ল পাকিস্তানের শেষ সাত উইকেট। ১৯.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তোলে ১৪৬ রান।

১৪৭ রানের লক্ষ‍্যমাত্রা স্থির করে ব‍্যাট করতে নামে ভারত। শুরুতেই অভিষেক শর্মা প‍্যাভেলিয়নে ফিরে যায়। ও যে ফর্মে নেই তা বোঝাই যাচ্ছিল। যেখানে লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৪৭, সেখানে বাকিরাও  দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো আউট হবেন, তা কল্পনা করতে পারেনি সমর্থকেরা। শাহিনের প্রথম বলে অভিষেক অল্পের জন্য আউট হতে হতে বেঁচে গেলেন। অভিষেক পরের ওভারেই ফিরলেন মারতে গিয়ে। আলগা শট খেলতে গিয়ে ফিরলেন সূর্যকুমার। এগিয়ে খেলতে গিয়ে ফিরলেন শুভমন গিল। ভারতের সামনে তখন হারের খাঁড়া ঝুলছে। তিলক না থাকলে এই জয় কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না, ত-ও সবাই মেনে নিচ্ছেন। তিলক বর্মা ৬৮ রান করেছেন।

প্রশংসা আরও দু’জনের প্রাপ্য। সঞ্জু স্যামসন এবং শিবম দুবে। টপ অর্ডার যে ভাবে অকারণ তাড়াহুড়ো করে, এই দু’জন সেই রাস্তায় হাঁটেননি। শিক্ষা নিয়েছেন। ধৈর্য ধরেছেন। সঞ্জুর সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি এবং শিবমের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি ভারতকে জিততে সাহায্য করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টি-২০ এশিয়া জেতা ভারতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে সমাজমাধ‍্যমে লিখেছেন, “অপারেশন সিঁদুর এ বার খেলার মাঠেও।” কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতীয় দলকে শুভেছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা অসাধারণ জয়। আমাদের ছেলেদের তীব্র উদ্যম আবারও প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।” একই সঙ্গে পাকিস্তানকে কটাক্ষ করেছেন শাহ বলেন, “ভাগ্যেই লেখা আছে, যে কোনো ময়দানে জয়ের মুকুট শুধুমাত্র ভারতকেই শোভা পায়।”


Share